অ্যান্ড্রোপজ:পুরুষের যৌন ক্ষমতা হ্রাস- কি সমাধান?

male andropose

বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরুষের যৌন ক্ষমতা হ্রাস পায়। যৌন ইচ্ছাও হ্রাস পায়। সাধারণত ৫০ বছরের পর পরই যৌন ইচ্ছা কমতে থাকে। তবে মহিলাদের মত হঠাৎ করে খুব দ্রুত এটা হ্রাস পায় না। পুরুষদের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে হ্রাস পায়।

 

মহিলাদের ক্ষেত্রে তাদের যৌন হরমোন ইস্ট্রোজেন প্রজেস্টেরন হঠাৎ করে কমে যায়। সেই সাথে যৌন ইচ্ছা ও যৌন ক্ষমতাও হঠাৎ করে কমে যায়। কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪০ বছরের পর তাদের যৌন হরমোন টেস্টোস্টেরন প্রতিবছর ২-৩% কমতে থাকে। এক পর্যায়ে গিয়ে এটা অনেক কমে যায়।

 

সাধারণত ৫০ বছরের পর যৌন ইচ্ছা কমতে থাকে। তবে কারো কারো এই বয়সের আগেও যৌন ইচ্ছা কমে যেতে পারে। তবে সেটা পারিবারিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবে সাধারণত হয়ে থাকে। কিছু রোগ ব্যাধির কারণেও এটা হতে পারে। যেমন ডায়াবেটিস, প্রেসার, হার্টের সমস্যা, স্ট্রোক, নার্ভের সমস্যা ইত্যাদি রোগ থেকেও হতে পারে। আবার কারো কারো ওই সব রোগের জন্য ঔষধ খাওয়ার ফলেও তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে যৌন ইচ্ছা কমে যেতে পারে ।

 

এ সমস্যা সমাধানের উপায় কি?

কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে শারীরিক কোন সমস্যা আছে কিনা। রক্ত পরীক্ষা ও হরমোন টেস্ট করে দেখতে হবে যে সেগুলোতে কোন সমস্যা আছে কিনা। তা হলে সেগুলোর চিকিৎসা করতে হবে। বিশেষকরে টেস্টোস্টেরন হরমোন টেস্ট করে দেখা হয়। এটি কমে গেলে রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে দেয়া যেতে পারে। এটি জেল হিসেবে পাওয়া যায়। ক্যাপসুল পাওয়া যায়। এবং ইঞ্জেকশনও পাওয়া যায়। জেল ও ক্যাপসুল প্রতিদিন নিতে হয়। ইঞ্জেকশন তিন মাস পর পর নিতে হয়। তবে অল্প দিন ব্যবহার করতে হবে।এবং সেটা ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক। দীর্ঘমেয়াদি ইউজ করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে।

 

ঔষধ ছাড়াও এটা থেকে উত্তরণের কিছু উপায় রয়েছে। যেমন নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা। মানসিক প্রশান্তিতে থাকা। রিলাক্সেশন প্রাকটিস করা। ভালো খাবার দাবার খাওয়া। বিভিন্ন ফলমূল শাকসবজি এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার পর্যাপ্ত খাওয়া। সুষম খাবার-দাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে পারলেও যৌন ইচ্ছা অনেকটা বেড়ে যাবে ।

 

যাদের ডায়াবেটিস, প্রেসার, হার্টের সমস্যা, স্ট্রোক এবং নার্ভের রোগ রয়েছে তারা ডাক্তার দেখিয়ে সেগুলো খুব ভালো নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। আর এসব রোগের কিছু ঔষধও যৌন ইচ্ছা বা যৌন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে চিকিৎসকের সাথে আলাপ করে বিকল্প ঔষধ গ্রহন করতে হবে ।

 

কারো কারো আবার এই বয়সে ইরেকটাইল ডিসফাংশন দেখা দেয়। ইরেকটাইল ডিসফাংশন হল লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা বা লিঙ্গ ভালোভাবে উত্থিত না হওয়া বা শক্ত না হওয়া ।

 

লিঙ্গ শক্ত না হওয়া এবং লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা বেশ কয়েকটি কারণে হতে পারে। কারো যদি রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়, কোন নার্ভের রোগ হয়, ডায়াবেটিস হয় এবং রক্ত চলাচল কমে যায় তাহলে লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বা মানসিক চাপে বা ডিপ্রেশনে থাকলে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। লিঙ্গোত্থান জনিত সমস্যা সমাধানেও মানসিক প্রশান্তিতে থাকতে হবে। ব্যায়াম করতে হবে। সেক্সের সময় ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে একটা আরামদায়ক পরিবেশে এবং টেনশন ছাড়া রিলাক্স হয়ে সেক্স করতে হবে। তাহলে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটানো যাবে ।

 

বয়স মানুষের প্রধান শত্রু। বয়সের কারণেই যৌন ইচ্ছা, যৌন উত্তেজনা এবং যৌন ক্ষমতা কমে যেতে পারে। তবে সেটা মেনে নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো আপনার সঙ্গীর সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে জীবনটাকে উপভোগ করবেন। যেভাবে যতটুকু সম্ভব ততটুকু করেই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করবেন।

 

শেষ কথা হল এই সমস্যা সমাধানের জন্য ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঔষধ খাবেন না। কারণ কিছু ঔষধ আছে যেগুলো এ সমস্যা সমাধান করতে পারে তবে সেগুলো সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। অনেক মারাত্মক সাইড এফেক্ট দেখা দিতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে ।

 

তবে ভালো খাবার দাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং সবসময় হাসিখুশি থাকলে ও মানসিক চাপ এড়িয়ে প্রশান্তিতে পূর্ণ জীবন যাপন করলে আপনার যৌন স্বাস্থ্যও থাকবে স্বাস্থ্যবান।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest
WhatsApp