এলার্জি : কি খাবেন কি খাবেন না

allergic rhinitis

এলার্জি কি

কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে শরীরে নানারকম অস্বস্তিকর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বেগুন চিংড়ি মাছ ইলিশ মাছ গরুর মাংস খেলে কারও গা চুলকায়। দুধ খেলে কারও হজমে সমস্যা হয়। কলা ডিম খেলে অনেকের পেটে ব্যথা হয়। অর্থাৎ কোন বিশেষ খাবার কারো কারো সহ্য হয় না। গরুর মাংস খেলে সবারই যে গা ফুলে যাবে বা চুলকাবে তা কিন্তু নয়। কারো ক্ষেত্রে এটি এলার্জি আবার কারো ক্ষেত্রে এলার্জি নয়। বেগুন খেলে অনেকের গা চুলকায়। তাই বলে সবারই যে চুলকাবে তা কিন্তু নয়। ভাত খেলেও কারও এলার্জি দেখা দিতে পারে (আমি এমন একজন ডাক্তারকে চিনি যার ভাতে এলার্জি আছে; তিনি কথনো ভাত খান না)। খাবার দাবার ছাড়া আরো অনেক কিছু থেকেই এলার্জি হতে পারে। রাস্তার ধূলা ঠান্ডা বাতাস ফুলের রেনু থেকেও এলার্জি হতে পারে। ঠান্ডা থেকে অনেকেরই এলার্জি হয়। ঘন ঘন হাঁচি হয়। একে বলে কোল্ড এলার্জি। আমাদের পারিপার্শ্বিক আরো নানা উপাদান থেকে এলার্জি হতে পারে।

 

কেন য় এলার্জি

কোন খাবার বা বস্তু শরীরে প্রবেশ করে অস্বস্তিকর কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলে তাকে বলে এলার্জি আর যে বস্তুটি বা খাবারটি এলার্জি সৃষ্টি করে তাকে বলে এলার্জেন। এই এলার্জেন শরীরে প্রবেশ করে যখন কোন গোলমাল শুরু করে তখন দেহের ইমুনো ক্ষমতা সেখানে বাঁধা দেয়। দেহের ইমুনো সিস্টেম এলার্জেন গুলো চিনে রাখে। যখনই কোন এলার্জেন শরীরে ঢুকে সাথে সাথে ইমুনো ক্ষমতা সেটিকে ধ্বংস করে দেয়। এসব ক্রিয়া বিক্রিয়ার প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়াই হলো এলার্জি।

 

কি করে বুঝবেন যে এটি এলার্জি

নাক চুলকানো, নাক ও চোখ দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ হওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া, কপালে সাইনাসের ব্যথা, মাথা ব্যথা, মাথা ভারী হয়ে থাকার  মতো উপসর্গ দেখা দিলে এলার্জি সন্দেহ করা যেতে পারে। তাছাড়া চিংড়ি মাছ কলা দই দুধ বেগুন গরুর মাংস সামুদ্রিক মাছ এবং ঠান্ডা পানীয় জাতীয় খাবার খেলে যদি কোন অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দেয় তবে এলার্জি সন্দেহ করা যেতে পারে।

এলার্জির চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ

এন্টি হিস্টামিন জাতীয় ট্যাবলেট খেলে এলার্জি কিছুটা কমে। ক্লোরোফেনিরামিন মেলিয়েট, সেটিরিজিন, লেভো সেটিরিজিন, লোরাটাডিন, ডেসলোরাটাডিন নামে বেশ কিছু এন্টি হিষ্টামিন আছে। কিছুটা ঝিঁমুনী বা তন্দ্রাচ্ছন্নতা দেখা দিতে পারে। তবে তেমন বড় কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না।

এলার্জির আধুনিক চিকিৎসা হলো- ভ্যাকসিন। দীর্ঘ দিন চালাতে হয় এই ভ্যাকসিন। প্রায় দুই থেকে পাঁচ বছর। তবে সব রকম এলার্জিই ভ্যাকসিনে সারে না। এটি আমদের দেশে এখনো সহজলভ্য নয়।

এলার্জি থেকে বাঁচার প্রধান উপায়- এড়িয়ে চলা। যাতে আপনার এলার্জি হয় সেটি খাবেন না, ছুবেন না। পরিবেশ দূষণ থেকে নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ শরীরে প্রবেশ করে। এতে হাঁপানি সর্দি হাঁচি কাশি একজিমা হতে পারে। দূষণ মুক্ত নগরীতে  বসবাস করুন। বাড়িতে বিড়াল কুকুর পাখি এসব পুষবেন না। এসবের পালক বা লোম থেকে এলার্জি হতে পারে। শোবার ঘরে বহু কারুকার্যখচিত আসবাবপত্র, যাতে ধূলা জমে, সেগুলো যতটা সম্ভব কম রাখুন। কার্পেট ও ভারী পর্দা সরিয়ে দিন। বিছানা নিজে ঝাড়বেন না। ঝুল ময়লা পরিস্কার করতে যাবেন না। কয়লা বা কাঠের চুলা জ্বালাবেন না।

ফুলের বাগান বা টবের গাছের ফুল থেকে এলার্জি হতে পারে। এগুলো ঘরের ভিতর রাখবেন না। ঘরে রোদ ঢুকতে দিন। আলো হাওয়া চলাচলের উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখবেন। বাড়ির দেয়াল স্যাঁত স্যাঁতে হলে সারিয়ে নিন। স্যাঁত স্যাঁতে দেয়ালে নানা রকম ছত্রাক জন্মায়। সেই ছত্রাক এলার্জি ঘটাতে পারে। ঘরের কার্পেট ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে সাফ করতে হবে। বিছানায় প্রচুর সংখ্যক মাইট পোকা থাকে। এগুলো এলার্জির হোতা। মাঝে মাঝে বিছানাপত্র রোদে শুকালে মাইট পোকা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

এয়ার কন্ডিশনার পরিষ্কার রাখুন। এর মধ্যে ধূলো জমলে ছত্রাক জমতে পারে। খাবার বেশিক্ষণ বাইরে থাকলে তাতেও ছত্রাক জন্মাতে পারে। ঘরের ভিতরে ফুলের টবের মাটিতেও ভিজা অবস্থায় ছত্রাক জন্মায়। এজন্য টবটি মাঝে মধ্যে রোদে রাখবেন। পুরনো বাড়ি বা বাংলো বাড়িতে প্রচুর ছত্রাক থাকে। ভালোভাবে ঝেড়ে মুছে দরজা জানালা খুলে বাতাস ও রোদ চালান করে তারপর থাকতে শুরু করুন। পুরনো বইয়ের সেলফ ঘাটাঘাটি করবেন না। এতেও ছত্রাক থাকে। পুরনো বই পড়তে হলে আগে কাউকে দিয়ে পরিষ্কার করিয়ে নিন।

অনেক সময় স্থান পরিবর্তন করলেও ভালো হয়। কারণ একেক জায়গার গাছপালা ধূলা বালি বাতাসের আর্দ্রতা একেক রকম। তবে পরিবর্তিত নতুন স্থানে দীর্ঘদিন থাকলে আবার এলার্জি দেখা দিতে পারে।

যাইহোক, এলার্জিকে রাখতে হবে আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণে। মানসিকভাবে এলার্জি মুক্ত থাকুন। এতে অন্তত আপনার প্রকোপ কমবে। আর যদি এমন হয় আপনার দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে এলার্জির কারণে- তবে একজন এলার্জি বিশেষজ্ঞের সাথে আলাপ করুন। তার আগে ঠিক করে নিন কিসে কখন কিভাবে এলার্জি হয় আপনার।

To connect the author Dr Golam Morshed FCPS, MRCP UK

http://facebook.com/drgolammorshed

https://www.youtube.com/channel/UC4fcXSFXW6440aiUCgWK0Ow

 

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest
WhatsApp